ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়া মেধাকচ্ছপিয়ায় ৫১৫ কোটি টাকা মুল্যের মাদার গর্জন বাগান এখনো অরক্ষিত, আলোর মুখ দেখেনি প্রস্তাবিত নাশনাল পার্ক

চকরিয়ার মেধাকচ্ছপিয়া ন্যাশনাল পার্কের ভেতর গর্জন গাছের গোড়া ছেঁেট এভাবে গাছ লুটের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বনদস্যুরা।

n-pindex এম রায়হান চৌধুরী, চকরিয় :::

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের মেধাকচ্ছপিয়ায় মাদার গর্জন গাছ সমৃদ্ধ দেশের প্রথম ও একমাত্র বাগানকে সরকার ১২বছর আগে ন্যাশনাল পার্ক ঘোষনা করলেও উন্নয়ন খাতে অর্থ বরাদ্ধের অভাবে দীর্ঘ সময়ে আলোর মুখ দেখেনি প্রকল্পটি। বাগানের চর্তুদিকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকায় সীমানা দেয়াল স্থাপনের জন্য বনবিভাগ আর্ন্তজাতিক সাহায্য সংস্থা অরণ্য ফাউন্ডেশনের কাছে ১৫ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যায় নির্ধারণ করে অর্থবরাদ্ধের আবেদন জানালেও সংশ্লিষ্টদের তদবির ও ইতিবাচক যোগাযোগের অভাবে এই খাতে অর্থবরাদ্ধ মেলেনি। এ অবস্থার ফলে প্রায় অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে প্রায় ৫১৫ কোটি টাকা মুল্যের মাদার গর্জন সমৃদ্ধ এ বাগানটি। বনবিভাগের অপ্রতুল জনবলে বিশাল আয়তনের বাগান দেখভাল করতে গিয়ে রীতিমত খিমশিম খাচ্ছেন বনকর্মীরা। এ সুযোগে স্থানীয় প্রভাবশালী বনদস্যু চক্র হানা দিয়ে কেটে লুটে নিয়ে যাচ্ছে বাগানের মাদার গর্জন গাছ। স্থানীয় পরিবেশ সচেতন মহলের অভিযোগ, সরকারের নেয়া সিদ্বান্ত বাস্তবায়নে ধীরগতির কারনে ন্যাশনাল পার্ক ঘোষনার পর থেকে এ পর্যন্ত বাগান থেকে কমপক্ষে কোটি টাকার গাছ লুটের ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, কক্সবাজার-চট্রগ্রাম মহাসড়ক লাগোয়া কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের ফুলছড়ি রেঞ্জের মেধাকচ্ছপিয়া বনবিটের ৩৯৫ দশমিক ৯২ হেক্টর বা ৯৭৮একর বনাঞ্চলকে ২০০৪ সালের ৪ এপ্রিল পরিবেশ ও বন মন্ত্রানালয়ের মাধ্যমে গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ন্যাশনাল পার্ক ঘোষনা করেন সরকার। পার্কটি ঘোষনার সময় বাগানে স্থিত মাদার গর্জন গাছের সংখ্যা দেখানো হয় ১০হাজার ৩৩৭টি।

বনবিভাগ সুত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর ন্যাশনাল পার্কের বাগান থেকে গর্জন গাছের বীজ সংগ্রহ করে নার্সারিতে চারা সৃজন করা হয়। পরে এসব চারা দেশের বিভিন্ন স্থানে বনবিভাগের বাগান সৃজনের জন্য সরবরাহ করা হয়। এজনই বাগানটি দেশের প্রথম ও একমাত্র মাদার গর্জন বাগান হিসেবে পরিচিত। এ অবস্থায় বাগানটির শতবর্শী মাদার গর্জন গাছসহ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ন্যাশনাল পার্কের প্রস্তাবনা নিয়ে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগ ২০০৪ সালে একটি প্রকল্প সারপত্র প্রস্তুত করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রানালয়ে পাঠায়। এরই প্রেক্ষিতে সম্ভাব্যতা যাছাই করে ওইবছরই সরকার সারপত্রের আলোকে বাগানটিকে ন্যাশনাল পার্ক ঘোষনা করেন।

সুত্র জানায়, ১৯৩১ ও ১৯৩৫ সালে বনবিভাগ চকরিয়া উপজেলার মেধাকচ্ছপিয়া ও খুটাখালী মৌজার ৩৯৫দশমিক ৯২ হেক্টর বনাঞ্চলকে নোটিফিকেশন মুলে সংরক্ষিত বনভুমি হিসেবে ঘোষনা করেন। অপরদিকে ২০০৪ সালে সরকার এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১৯৩১ ও ১৯৩৫ সালের গেজেট নোটিফিকেশনটি বাতিল ঘোষনা দিয়ে নতুন করে বৃক্ষ সম্পদ, বন্যপ্রাণী সংরক্ষন, চিত্র-বিনোদন ও পর্যটন সুবিধার উন্নয়নের জন্য এ বনভুমিকে ন্যাশনাল পার্ক ঘোষনা করেন।

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে মহাসড়কের পাদদেশে মেধাকচ্ছপিয়ার বিস্তৃত এ বাগানটির অবস্থান। ১৯৯১ সালে প্রলংকারী ঘুর্ণিঝড়ের পর এখানকার বৃক্ষরাজিতে ভরপুর বাগানটির বেশির ভাগ এলাকা দখল করে কয়েক হাজার অবৈধ বসতি গড়ে তুলেন উপকুল ও দীপাঞ্চলে ঘুর্ণিঝড় আক্রান্ত লোকজন। মুলত মহাসড়কের পাশে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় বাগানটি অল্প সময়ের ব্যবধানে জবরদখলের হিড়িক পড়েছে।

পরিবেশ সচেতন মহল জানিয়েছেন, অবৈধ বসতি নির্মাণের মাধ্যমে বনাঞ্চলের জায়গা দখলের পাশাপাশি স্থানীয় প্রভাবশালী সশস্ত্র বনদস্যুরা প্রকাশ্য দিবালোকে হানা দিয়ে কেটে লুটে নিচ্ছে বাগানের শতবর্শী গর্জন গাছ। ন্যাশনাল পার্ক ঘোষনার ১১বছর সময়ে ইতোমধ্যে অন্তত কোটি টাকার গাছ লুপাট হয়েছে বাগান থেকে। এখনো চলছে গাছ নিধনের অপচেষ্টা।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বাগানের গর্জন গাছ নিধনের আগে বনদস্যুরা কৌশল অবলম্বন করেন। তাঁরা প্রথমে টার্গেট করা গাছের ডাল-পালা কেটে ফেলেন। পরে গাছের গোড়ায় (গার্ডলিং) ছেঁেট ফেলে। এরপর গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করেন তুঁতুঁ (এক ধরণের কীটনাশক)। ফলে আস্তে আস্তে গাছের ডাল-পালা ও পাতা শুকিয়ে গেলে সুযোগ বুঝে কেটে লুটে নিয়ে যায় তাঁরা। এ অবস্থায় প্রস্তাবিত ন্যাশনাল পার্কটি বাস্তবায়নে ধীরগতি হওয়ায় এখনো অব্যাহত রয়েছে বাগানের শতবর্শী গর্জন গাছ লুটের ধারাবাহিকতা। #

পাঠকের মতামত: